বাংলাদেশ জ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র (BDKRC)

ইমাম হামিদুদ্দীন ফারাহী (রহ.)

১৮ নভেম্বর ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের উত্তর প্রদেশের আজামগড় জেলার ফারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১১ নভেম্বর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু‌বরণ করেন।

ফারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করায় তারা নামের শেষে ফারাহী লেখা হয়। তার পিতার নাম আব্দুল করিম শেখ এবং মাতার নাম মুকিমা বিবি। অতুলনীয় ধর্মতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিক আল্লামা শিবলী নোমানি (রহ.)-এর মামাতো ভাই ছিলেন এ মনীষী এবং শিবলীর কাছেই তিনি প্রাথমিক আরবী শিক্ষা সম্পন্ন করেছিলেন।

ইমাম ফারাহী তার জীবনের প্রায় ৫০ বছর কুরআন গবেষণায় ব্যয় করেছিলেন এবং আল্লাহর রহমতে তিনি কুরআনের নজম বা সূরা ও আয়াতের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্কের একটা বোধগম্য মডেল দাঁড় করাতে সক্ষম হন, যা পূর্বের বহু কুরআন গবেষক বিচ্ছিন্নভাবে বা অস্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল। আল্লামা শিবলী নুমানী (রহ.) এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন, “এটা (অর্থাৎ কুরআনের নজম তত্ত্ব) এক অতিমানবীয় সাফল্য।”

ইমাম ফারাহী তার গবেষণায় প্রমাণ করতে হয়েছিলেন যে, কুরআন মহান আল্লাহর কোন বিচ্ছিন্ন বার্তা নয়। কুরআন স্পষ্ট এবং অত্যন্ত সুনিপুণভাবে সজ্জিত আসমানী হেদায়েত। কুরআনের প্রাঞ্জলতা, অলংকার তার প্রতিটি আয়াত ও শব্দে স্পষ্ট।

আল্লামা শিবলী নোমানি (র.) বলেন: “সাধারণত পণ্ডিত মনীষী দুনিয়ার কাছে অজ্ঞাত থাকেন না এবং তার মহান কর্মগুলো ইতিহাসের পাতায় ভাস্বর থাকে। তবে প্রত্যেকটি নিয়মের যেমন ব্যতিক্রম থাকে, আর সেটাই হয়েছে মৌলভী হামিদুদ্দীনের বেলায়। তার অনবদ্য কর্ম ‘নাজমুল কুরআন’ মুসলিম উম্মাহর জন্য ঠিক ততটাই প্রয়োজনীয়, যতটা তৃষ্ণার্তের জন্য প্রয়োজন পানির।”

সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (র.) বলেন: “সাধারণভাবে একথা প্রমাণিত যে, আল্লামা ফারাহী কুরআন গবেষণায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত ছিলেন। তিনি তার জীবনের বড় অংশ কুরআন গবেষণায় ও এর ভাব উপলব্ধিতে ব্যয় করেছেন। কুরআনের উপর তিনি এতটাই কৃতিত্বের অধিকারী হয়ে লেখালেখি করেছেন যে, তার সমতুল্য ও তার কাছাকাছি কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।”

মাওলানা মানাজির আহসান গিলানি (র.) বলেন: “তার লিখিত গ্রন্থের মূল বৈশিষ্ট্য হলো কুরআন, বাইবেল ও সাহিত্যের গভীর আলোচনা এবং কুরআনের আয়াতসমূহের মাঝে যোগসূত্র প্রমাণের নজিরবিহীন প্রচেষ্টা। তার এই কাজ প্রমাণ করে যে, কুরআন সত্যিই আসমানী গ্রন্থ।”

সৈয়দ সুলাইমান নদভী (র) বলেন: “১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর এ যুগের ইবনে তাইমিয়াহ মারা গিয়েছেন। তার প্রতিভার উজ্জ্বলতা অতিক্রম করার সম্ভাবনা এখন আর নেই। তিনি প্রাচ্য-পাশ্চাত্য উভয় জ্ঞানের জ্ঞানী এ অলৌকিক ব্যক্তিত্ব। কুরআনের গভীর পণ্ডিত, কুরআনের রহস্যভেদী, ধর্ম প্রেমের মূর্ত প্রতীক, জ্ঞানের অতুলনীয় সমুদ্র, নিজের ভিতরে ধারণ করা জীবন্ত একটি প্রতিষ্ঠান, উন্নতমানের গবেষক। দুঃখের বিষয় এই মহান ব্যক্তি জন্ম নিলেন আর চলেও গেলেন, কিন্তু দুনিয়াবাসী বুঝলো না: কে আসলো আর কে চলে গেলো।”

Add New Playlist