হাদিসকে কুরআনের সম পর্যায়ে নিয়ে আসা
শুনে অবাক হবেন যে বেশীরভাগ আলেমগন দ্বীনের মূল ভিত্তি হিসেবে যে বিষয়টি পেশ করে সেটিই আসলে দ্বীনের নামে ভ্রষ্টতা। আর তা হচ্ছে মূল হুকুমকে ব্যাখ্যার জায়গায় আর ব্যাখ্যাকে মূল হুকুমের যায়গায় রাখা। এর মানে কি? উদাহরন হিসেবে বাংলাদেশের আঈন বা কানুনের কিছু মূল ধারা আছে। যে ধারা সামনে রেখে উকিলগণ একেক আবেদন পেশ করে থাকে। কোর্টে গেলে দেখবেন একেক উকিল তাদের সামনে আঈনের মূল ধারার বই রেখে বলে থাকে যে আঈনের এতো নাম্বার ধারা হিসেবে আমার আসামি বেকুসুল খালাস হওয়া উচিৎ এবং অপর উকিলও আঈনের মূল ধারা সামনে রেখে আরেক ব্যাখ্যা দিয়ে বলে আইনের অমুক ধারা অনুযায়ী আসামির সাজা হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে খেয়াল করলে দেখবেন উভয়ের আপিল বা আবেদন যাই হোকনা কেন মূল বিষয় থাকে আঈনের মূল ধারা যা দিয়ে উকিলদের আবেদনগুলো পর্যালোচনা করা হয়। কথা হচ্ছে আমরা কি আঈনের মূল ধারা দিয়ে উকিলদের আবেদনকে বিবেচনা করবো নাকি উকিলদের আবেদনকে মূলে রেখে আঈনের মূল ধারাকে বিবেচনা করবো? অবশ্যই আমরা মূল আইনের ধারাকে সামনে রেখে উকিলদের বা মানুষদের কথা বিবেচনা করবো তাইনা? বিষয়টি কত স্পষ্ট আর সহজ।
আমাদের দ্বীন ইসলামে কুরআন ও সুন্নাত হচ্ছে দ্বীনের মূল ধারা বা আঈন। হাদিসকে মূল ধারার জায়গায় রেখে কুরআনকে ব্যাখ্যার জায়গায় রাখাই হচ্ছে দ্বীনের নামে সবচাইতে বড় পথভ্রষ্টতা। এই কথা আমার নয়, বরং আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলা নিজেই এ ব্যাপারে কুরআন মাজিদে উল্লেখ করেছেন। প্রথমে মানুষ সৃষ্টি করে আল্লাহ্ তা’আলা তার ভিতর ভালোমন্দ বুঝার জ্ঞান দিয়ে দিয়েছেন। “তিনি যখন মানুষ সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে ভালমন্দের জ্ঞান দিয়েই পাঠিয়েছেন” ( শামস ৯১:৮)। আর তারপর দুনিয়াতে যখন তারা বিভিন্ন মতবিরোধে লিপ্ত হয় তখন তাদের নিকট আল্লাহ্ তা’আলা একজন রসূল প্রেরন করেন কিতাব সহকারে। কিতাব কেন নাজিল করেন? যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করে সে সকল মতবিরোধের ফায়সালা করার জন্য (মায়েদা ৫:৪৮)।
আল্লাহ্র রসূল (স) আমাদেরকে যে কুরআন আল্লাহ্র কিতাব হিসেবে দিয়েছেন সে নিজের সম্পর্কে বলে, সে মিজান (সত্য ও ইনসাফের মানদণ্ড) (শূরা ৪২:১৭), ফুরকান (সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী) (ফুরকান ২৫:১), মুহাইমিন (যে পথ দেখানোর জন্য অভিবাবক) (মায়েদা ৫:৪৮), হাকিম (মানুষের মাঝে ফায়সালা বা সমাধান দাতা গ্রন্থ) (ইউনুস ১০:১)।
এবং আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, হক ও বাতিল, তাওহীদ ও শিরক, ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসেবে তিনি ফুরকান নাজিল করেছেন যাতে সে বিশ্ব জগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে (ফুরকান ১)। আর আপনি সেই কিতাবকে মূল অবস্থানে না রেখে ব্যাখ্যার জায়গায় নামিয়ে নিয়েছেন !
আপনি বলছেন যে অমুক থেকে অমুক, অমুক থেকে অমুক, অমুক থেকে অমুক … শুনে শুনে একটি কথা আমাদের পর্যন্ত এসেছে। আর কুরআন মাজিদ খুলে যখন আমরা দেখি এই লোকমুখে শোনা কথাটি কুরআন মাজিদের বিরুদ্ধে চলে যায় তখন আপনি ঐ কথাটিকে মূল জায়গায় রেখে কুরআনকে তার ব্যাখ্যা হিসেবে নিয়ে ফায়সালা করলেন যে কুরআনের এই আয়াত তো রহিত হয়ে গিয়েছে! অথবা কুরআনের আয়াতের যে অর্থ পুরো দুনিয়ার উম্মতের মাঝে স্পষ্ট কিন্তু লোকমুখে শোনা কথা যদি সেই আয়াতের বিপরীত কোন কথা নিয়ে আসে তখন আপনি কুরআনের সেই স্পষ্ট অর্থকে বাতিল করে সেই কথাটিকেই মূল অবস্থানে রাখছেন।
হাদিসের অবস্থান কি এই বিষয়ে এখন আমরা কথা বলছি না। সেটা ভিন্ন টপিক। আপনি দুই মিনিটের জন্য আমাদেরকে হাদিস অস্বীকারকারী বলেন সমস্যা নেই, কিন্তু পষ্ট করে উঁচু গলায় বলতে চাই যে কুরআনই হচ্ছে আমাদের জন্য মূল বিধান। আর এই কথা আমরা বলছি না, বরং যারা হাদিসকে কুরআনের যায়গায় অবস্থান দিয়েছে তারাই উসুল হিসবে এটা মেনেছে যে মানুষের মুখে শোনা কোন কথাই গ্রহন করা হবেনা যদি সেটা কুরআন মাজিদের বিরুদ্ধে যায়। তাই উসুলের ক্ষেত্রে আমরা কারো বিরোধি নই।
আমাদের উস্তাদ জাবেদ আহমেদ ঘামিদির কিতাব “মীযান” খুললে দেখবেন ১২০০+ হাদিস তিনি উনার কিতাবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সেখানে হাদিস প্রথমে আসেনি বরং কুরআন আগে এসেছে আর সেটার ব্যাখ্যা হিসেবে হাদিস আনা হয়েছে। আর এটাও বলা আছে যে হাদিসকে কুরআনের সামনে রেখে ব্যাখ্যা হিসেবে গ্রহন করা হবে কারন রসূল (স) দ্বীন হিসেবে কিছু দিলে সেটা কুরআনের মূল হুকুমের ব্যাখ্যা হিসেবেই দিয়েছেন। তাই এটা কখনো বলা যাবেনা যে হাদিসের মধ্যে দ্বীনের মূল ধারা বর্ণিত হয়েছে আর এর মাধ্যমে আমরা কুরআনের হুকুমকে বাতিল করে দিবো বা রহিত করে দিবো! কক্ষনো নয়।
আমাদের সমাজে দ্বীন হিসেবে যে বিষয়টি খুটে গেড়ে নেয়া হয়েছে তা হচ্ছে আমরা আয়াত পেশ করলে আপনি এর বিপক্ষে হাদিস পেশ করেন। হাদিস কি আর হাদিসের অবস্থান কি সেটা আমরা আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করবো কিন্তু এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার যে লোকের মুখে শুনে শুনে কোন ব্যক্তি নিজের জ্ঞান দিয়ে যে কথা প্রচার করলো সেটা কখনো আল্লাহ্র কিতাবের সমকক্ষ হতে পারে না। তাই লোকমুখে শোনা কথাকে ব্যাখ্যার অবস্থান থেকে উপরে নিয়ে কুরআনের জায়গায় রেখে কুরআনকে মূল জায়গা থেকে সরিয়ে ব্যাখ্যার অবস্থানে নেয়া হচ্ছে ধর্মের নামে সবচাইতে বড় পথভ্রষ্টতা। কেন? কারন আমাদের রসূল মুহাম্মাদ (স) দ্বীন হিসেবে আমাদেরকে কুরআন ও সুন্নাত দিয়েছেন। আর হাদিসতো লোকেরা আমাদের রসুলকে (স) যা করতে দেখতো, শুনত, তা নিজ থেকে প্রচার করেছে। এর কোন দ্বায়ভার আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রসূল (স) নেননি।
অবশ্যই হাদিস আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান সম্পদ, আমাদের মাথার মুকুট, আমাদের চোক্ষুশিতলকারী বস্তু, আমাদের প্রিয় রসুলের (স) কথা। যদি আল্লাহ্র রসুলের (স) কোন কথা আমাদের কাছে ১০০% অথেন্টিকভাবে পৌঁছে যায় তাহলে আমরা তা অস্বীকার করতে পারবো না। কারন আল্লাহ্র রসুলের (স) কথার অস্বীকার করা মানে আল্লাহ্র রসুলের (স) নবুয়াতকে অস্বীকার করা। কিন্তু লোক মুখে শোনা সে কথা যদি আল্লাহ্র কিতাবের কোন আয়াতের বিপক্ষে চলে যায় তবে আমরা কি বলবো? এক্ষেত্রে আমরা এটাই বলবো যে আল্লাহ্র কিতাব কক্ষনো ভূল হতে পারেনা ! হয়তো লোকেরাই হাদিস প্রচারে ভূল করেছে। আল্লাহ্র রসূলও (স) ভূল হতে পারেনা। বরং লোকেরাই হয়তো কথাটি প্রচার করার ক্ষেত্রে ভুল করেছে বা ভুলে গিয়েছে।
উস্তাদ জাবেদ আহমেদ ঘামিদির হাদিস প্রজেক্টে আমরা কুরআনকে মূল অবস্থানে রেখে এবং হাদিসগুলোকে ব্যাখ্যা হিসবে রেখে কাজ করছি। উস্তাদ জাবেদ আহমেদ ঘামিদি তার মীযান কিতাবে ১২০০+ হাদিস পেশ করেছেন, এছাড়াও আমরা সমস্ত হাদিসগুলোকে কুরআনের ব্যাখ্যা হিসেবে নিয়ে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ হাজারের বেশী হাদিসের কাজ শেষ হয়েছে। হাদিসের সবচাইতে বড় প্রোজেক্ট নিয়ে আমরা কাজ করছি আলহামদুলিল্লাহ। আমরা পেশ করেছি কুরআনকে মূল অবস্থানে রেখে হাদিসগুলো যাচাই করলে তাদের মধ্যে সুন্দর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।
আমরা এটা করিনি যে হাদিসে যেহেতু কুরআন থেকে ভিন্ন একটি কথা বর্ণিত হয়েছে তাই কুরআনকে তার জায়গায় রেখে হাদিসকে মূল হিসেবে গ্রহন করে ফেলি। একটি উদাহরন দিচ্ছি যাতে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হয়। যেমন আপনি একটি হাদিস পেশ করলেন যে রসূল (স) বলেছেন, أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ الْمُشْرِكِينَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ আমাকে লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে, যে পর্যন্ত না তারা এই কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল (নাসাঈ ৩৯৬৮)। হাদিসটি আপনি আমার কাছে পেশ করলেন আর বললেন, আল্লাহ্র রসূল (স) যেহেতু ইসলাম গ্রহন না করলে যুদ্ধ করতে করতে বলেছেন তাই আমরাও পুরো দুনিয়াতে যুদ্ধ করবো যতক্ষণ না মানুষ কালিমা পড়ে বা মুসলিম হয়। তখন আমি আপনাকে বলবো যেহেতু আপনি দ্বীনের একটি হুকুম বা আঈন পেশ করলেন তাই চলুন এই কথাটিকে আমরা মূল আঈন বা কুরআনের কাছে নিয়ে যাই আর বুঝার চেষ্টা করি যে আল্লাহ্র রসুলকে এই হুকুমটি কোন সময়ে, কার জন্য, কেন দেয়া হয়েছিলো। যখন আমরা কুরআনের সামনে নিয়ে হাদিসটি দেখি তখন দেখতে পাই এই হুকুমতো বর্তমান দুনিয়ার জন্য আমভাবে কোন হেদায়েত নয়। বরং এই হুকুম তো রসুলের সাথে সম্পৃক্ত খাস বিষয়। এখানে তো কেয়ামত পর্যন্ত প্রয়োগ করার কোন হুকুম ছিলোই না।
রসুলগণের আল্লাহ্ তা’আলা কুরআন মাজিদে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তা হচ্ছে আল্লাহ্ তা’আলা যখন কোন জাতির নিকট রসূল প্রেরন করেন তখন সেই জাতির জন্য কেয়ামতের একটি ছোট নমুনা দেখানো হয়। এর মানে ঐ জাতির উপর রসুলের মাধ্যমে ফায়সালা চলে আসে। তখন সেই জাতির অবিশ্বাসীদের উপর নেমে আসে আল্লাহ্র আজাব এবং বিশ্বাসীদের সুসংবাদ দেয়া হয়। আর এই আজাব আল্লাহ্র রসূল এবং তার সঙ্গীগণের মাধ্যমে জিদাদ করে হতে পারে, অথবা আল্লাহ্র ফেরেশতা দিয়েও হতে পারে, অথবা রসুলের ইন্তেকালের পরেও আল্লাহ্ ঐ জাতিকে আজাব দিতে পারে, যেমন ইসা (আ) কে আল্লাহ্ তা’আলা মৃত্যু দিয়ে নিজের কাছে তুলে নেন তারপর ঐ জাতিকে আজাব দেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, অতঃপর আমি তাদেরকে (শাস্তির) যে ওয়াদা দিয়েছি তার কিছু যদি তোমাকে (এ পৃথিবীতেই) দেখিয়ে দেই অথবা (তাদেরকে শাস্তি দেয়ার পূর্বেই) তোমার মৃত্যু ঘটাই, (উভয় অবস্থাতেই) তাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। (আমার শাস্তি থেকে তারা রেহাই পাবে না) (গাফির ৭৭)।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আর প্রত্যেক উম্মতের জন্য রয়েছে রাসূল। তারপর যখন তাদের রাসূল আসে, তাদের মধ্যে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করা হয় এবং তাদের যুলম করা হয় না (ইউনুস ৪৭)। তিনি আরো বলেন, আর আমি রসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না (ইসরা ১৫)। মুহাম্মাদ (স) এর সামনের কুরাঈশ জাতিকেও আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, তোমাদের (মক্কার) কাফিররা কি তাদের চেয়ে ভাল? না কি তোমাদের জন্য মুক্তির কোন ঘোষণা রয়েছে (আসমানী) কিতাবসমূহের মধ্যে? নাকি তারা বলে, আমরা সংঘবদ্ধ বিজয়ী দল? এ দল তো শীঘ্রই পরাহিত হবে এবং পিঠ দেখিয়ে পালাবে (কামার ৪৩-৪৫)। এভাবেই আল্লাহ্ তা’আলা রসূল পাঠিয়ে তাদের জাতির ফায়সালা করেন। যেমন নুহ (আ) এর জাতিকে বন্যায়, মুসার (আ) জাতি ফেরাউনকে সমুদ্রে ডুবিয়ে, লুতের (আ) জাতিকে পাথরের বৃষ্টিতে, মুহাম্মাদের (স) জাতিকে রসূল এবং সাহাবীদের মাধ্যমে ফায়সালা করা হয়। এই কাজ আল্লাহ্ তা’আলা রসূল পাঠিয়ে করেন সাধারণ মানুষকে এই হুকুম দেননি।
তখন আপনি বললেন, দেখ ভাই আসল হুকুম কুরআন যাই থাকুক আমরা সেটা রহিত ঘোষণা করে দিলাম আর হাদিসে যা আছে সেটাই মূল আঈন হিসেবে নিয়ে দুনিয়াতে প্রয়োগ করবো ! এ বলে আপনি দুনিয়াতে হত্যা আর বিশৃঙ্খলা চালিয়ে দিলেন।
আমরা বলবো যেই রসূল আমাদেরকে কুরআন দিয়েছেন তিনিই কুরআনকে মূল হুকুমের অবস্থান দিয়েছেন আর কুরআনকে মূল অবস্থানে রাখার নামই রসুলের (স) সত্যিকার অনুসরণ। তাই সাধারণ মানুষের সামনে যখন কোন হুজুর হাদিস পেশ করবে তখন সে হুজুরের কাছে জিজ্ঞাস করবে এই হাদিসের প্রেক্ষাপট কি ছিলো? কুরআনের কোন হুকুমের সাথে এই হাদিস সম্পৃক্ত? যদি কুরআনের আসল হুকুমের সামনে এই হাদিস বিরোধি হয় তবে আমরা হাদিসটিকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করবো, আলাপ আলোচনা করবো কিন্তু এটা বলবো না যে কুরআন তো ছিলো ঐ সময়ের অল্প কিছু মানুষের জন্য কিন্তু ব্যাখ্যা মূলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ইত্যাদি। এটা হবে সবচাইতে বড় পথভ্রষ্টতা।
অনেকে বলবে কুরআনে তো আসল হুকুম হিসেবে নামাযের ব্যাপারেও কিছু নেই ! আর এই কথাগুলো বলে কুরআনকে আসল হুকুমের অবস্থান থেকে নামিয়ে নিচে নিয়ে আসে আর তখন কুরআন সেই অবস্থানেই থাকে না যেখানে থাকার কথা ছিলো। আপনি কোন হাদিস পেশ করার পর আমি যদি বলি হাদিসটি নিয়ে পুনরায় গবেষণা করুন, হতে পারে হাদিসের বর্ণনাকারী নিজে থেকেই কোন কথা পেশ করে দিয়েছে, নয়তো সে ভুলে গেছে কারন প্রায় অর্ধেক হাদিসতো এইসকল কারনেই জয়িফ হয়ে গিয়েছে। তখন আপনি বলবেন ওহ আচ্ছা, তারমানে তুমি বলতে চাও হাদিস ভুল? হাদিসের তো তবু বর্ণনাকারীর সনদ পাওয়া যায় কিন্তু কুরআনের ক্ষেত্রে তো সনদও নেই। একথা বলে আপনি হাদিসকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কুরআনকে নিচে ফেলে দেন।
চিন্তা করুন বিষয়টা কত ভয়ানক, কারন আল্লাহ্র রসূল (স) বলেছেন এই কুরআন তাদের বিরুদ্ধে বিচারের মাঠে সাক্ষী দিবে যারা কুরআনকে ছেড়ে দিয়েছিলো। ধর্মের মূল গোমরাহি হচ্ছে আসল হুকুমকে নিচে নামিয়ে ব্যাখ্যাকে আসলের জায়গা দিয়ে দেয়া। আর এতে পুরো দ্বীনের ভিত্তি নষ্ট হয়ে যায়। কুরআন নামায, রোজা, হজ্জের যা বলা হয়েছে তা কুরআন নাজিলের পুর্ব থেকেই সমাজে প্রচলিত ছিলো। কারন এই দ্বীন মুহাম্মাদ (স) থেকে শুরু হয়নি বরং আদম (আ) থেকেই শুরু হয়েছে। মুহাম্মাদ (স) আসার পুর্বেই সমাজে নামায, রোজা, হাজ্জ সবই চালু ছিলো। আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের রসুলকে বলেছেন তুমিও সেই দ্বীন অনুসরণ করো যেই দ্বীন পুর্বের রসূল ইব্রাহীম থেকে চলে এসেছে (নাহাল ১২৩)। সকল নবী রসূল নামায পড়তেন, রোজা রাখতেন। কুরআন পড়লে দেখবেন পুর্বের নবী রসূলগণ নামায পড়তেন। এমনকি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তেন। রোজার আয়াত তো শুরুই হয় এটা বলে যে হে মুমিনগণ তোমরা সেভাবে রোজা রাখো যেভাবে তোমাদের পুর্বের লোকেদের উপর রোজা ফরয হয়েছিলো। তেমনি হজ্জ শুরু হয় ইব্রাহীম (আ) থেকে। যাকাত, ওমরাহ, বিবাহ, তালাক, ওজু, খৎনা সহ সকল সুন্নাত পুর্বের নবী রসুলের থেকে চলে এসেছে। রসূল (স) শুধু এই সুন্নাহগুলো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন এবং কোথাও কোন বিষয় বিলুপ্ত হলে বা ভূল হলে আল্লাহ্ তা’আলা রসুলের মাধ্যমে তা শুধরে দিয়েছেন বা পুনরায় চালু করে দিয়েছেন। তাই একথাটিই আবান্তর যে কুরআনে নামায রোজার বিধান নেই। কারন এগুলো সবই পুর্বে থেকেই সমাজে প্রচলিত ছিলো।