কুরআন মজিদের একটি আয়াতকে অনেক লোক দ্বীনের বিজয়ের জন্য নিজেদের সংগ্রামের উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। আয়াতটির এই ব্যাখ্যা আমাদের মতে কুরআনের দাবির একেবারেই বিপরীত। বিষয়টির বিশ্লেষণ আমরা এখানে তুলে ধরছি–
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
আয়াতটির অনুবাদ: “তিনি হচ্ছেন সেই সত্তা, যিনি তাঁর রাসুলকে দিকনির্দেশনা তথা সত্য ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি এটাকে অন্য সকল ধর্মের ওপর বিজয়ী করেন, ওই মুশরিকরা এটাকে যতই অপসন্দ করুক।” (সফ: ৯)
এ আয়াতে চিন্তা করুন। এখানে নবী (সা.)এর ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর ওই অকাট্য নীতি ব্যক্ত করেছেন, যা কুরআনের জায়গায় জায়গায় রাসুলদের ব্যাপারে আল্লাহর একটি অকাট্য নীতি হিসেবে আলোচিত হয়েছে। নীতিটি হচ্ছে এই যে, রাসুলদের দ্বারা যখন কোনো জাতির ওপর বিশ্ববিধাতার সত্য উন্মোচন পর্ব তার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যায়, তখন আল্লাহ এই জাতির ওপর রাসুলদের বিজয়ী করেন। যিনি শুধু নবী তিনি হয়ত বিজয়ী নাও হতে পারেন, কিন্তু যিনি নবীর পাশাপাশি রাসুলও, তিনি সর্বাবস্থায় তাঁর জাতির ওপর বিজয়ী হন। এ বিজয় হয় তাঁর জীবদ্দশায় হয় কিংবা তিনি দুনিয়া থেকে চলে যাবার পর তাঁর সাথী-সঙ্গীরা এ বিজয় অর্জন করেন।
আল্লাহ বলেন—
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُم مِّنْ عَمَلِهِم مِّن شَيْءٍ ۚ كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ ﴿٢١﴾ وَأَمْدَدْنَاهُم بِفَاكِهَةٍ وَلَحْمٍ مِّمَّا يَشْتَهُونَ ﴿٢٢﴾
“নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করছে, তারা লাঞ্ছিত হবেই। আল্লাহ লিখে নিয়েছেন, আমি ও আমার রাসুলগণ বিজয়ী হবই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ শক্তিশালী-পরাক্রমশালী।” (৫২: ২১-২২)
নবী করিম (সা.)ও আল্লাহর রাসুল ছিলেন। তিনি যে তাঁর জাতির ওপর বিজয়ী হবেন, এ কথা সুস্পষ্টভাবে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিবৃত হয়েছে। এই বিজয় অর্জনের জন্য আল্লাহ রাসুল ও তাঁর সঙ্গীদেরকে কিতাল তথা যুদ্ধের হুকুম দিয়েছেন, যেখানে আল্লাহ সরাসরি সাহায্য করেছেন এবং শেষপর্যন্ত আরবের জমিনে আল্লাহ রাসুল ও তাঁর সঙ্গীদেরকে বিজয়ী করেছেন।
সূরা সফের আলোচিত আয়াতে আল্লাহ এ বিজয়ের কথাই বলেছেন। আয়াতে অন্য সকল ধর্ম বলতে আরবের সকল ধর্ম উদ্দেশ্য। কেননা রাসুল (সা.) যে জাতির কাছে সরাসরি প্রেরিত হয়েছেন, তারা হচ্ছে আরব। এটা হচ্ছে মূলত একটি শাস্তি, যা রাসুলের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর জাতির ওপর প্রয়োগ করেছেন। সুতরাং পরবর্তী সময়ে আসা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য নিজেকে রাসুলের আসনে বসিয়ে নেওয়ার কোনো অধিকার নেই।