হাদীস ও সুন্নাহর মাঝে পার্থক্য বুঝতে না পারলে সমস্যা। কিছু হাদিসে সুন্নাহর উল্লেখ থাকতে পারে কিন্তু সব হাদিস সুন্নাহর বিষয় নয়। বিদায় হজের ভাষণে রাসূল (স:) কুরআন ও সুন্নাহর কথা বলেছেন সেখানে হাদিস শব্দ ব্যবহার করেন নাই।
সুন্নাহ ও হাদীস সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে মুসলিম সমাজে এসেছে। সুন্নাহ এসেছে বংশ পরস্পরায় মুতাওয়াতির অনুসরণে রাসুলের সময় থেকে এবং তা অনুসরণ করা ধর্মের বিষয়।
হাদিস সাহিত্য আসার অনেক আগে থেকেই মানুষ জানতো কিভাবে নামাজ পড়তে হয় ও রোজা রাখতে হয় কিংবা বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতে হয়।
পক্ষান্তরে বেশীর ভাগ হাদিস এসেছে নবীর ওফাতের অনেক অনেক বছর পর বিভিন্ন একক ব্যক্তির রেওয়ায়াত বা বর্ণনায়। হাদিস ইসলামের মূলনীতি বুঝার কোন জরুরী বিষয় নয় যদি তাই হত তাহলে কোরআনের মত এগুলোকে লিখে রাখতে রাসুল (স:) তখন বলতেন । কিন্তু আমরা জানি ইসলামী ধর্মীয় ইতিহাসে বলা আছে যারা ছিলেন নবীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী ওনারা হাদীসের নামে কিছু লেখা থাকলে সে গুলোকে জ্বালিয়ে দিতেন।
আজ লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় হাজার বছর পুরানো কোরআন শরীফের লিখিত কিছু সূরা পাওয়া গেলেও আজ পর্যন্ত হাদীসের নামে সেরকম কোন লেখা পাওয়া যায় নাই এবং তা না পাওয়ারই কথা। কেননা সেগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হত।
রাসুলের ওফাতের অনেক বছর পর সেই মধ্যযুগ থেকে ইসলামী সভ্যতার একটি ঐতিহ্য হিসাবে হাদিস সাহিত্য গড়ে উঠেছে এবং এই হাদীস চর্চা একটি প্রাতিষ্ঠানিকতায় রূপ নিয়েছে যা কালের পরিক্রমায় মুসলমানদের ধর্মীয় অঙ্গনে একটি শক্তিশালী অবস্থানও গড়ে তুলেছে। সেখানে বিস্তারিত তথ্যের অভাব, অতিরঞ্জন, অতিকথন, বর্ণনাকারীর দুর্বলতা এবং সংগ্রহকারীর অতি উৎসাহ কিংবা খ্যাতির নেশা ইত্যাদি নানা বিষয় থাকতেই পারে।
অবশ্য হাদিস ক্লাবের মেম্বাররা বলতে চাইবেন, “এগুলো আমাদের অতীতের বুজুর্গরা বিবেচনা করেছেন এবং হাদিস সংকলন খুবই বৈজ্ঞানিক।” কিন্তু হাদিসের যে বিজ্ঞান সৌদিতে ঠিক থাকে সেই বিজ্ঞান আবার ইরানে গিয়ে অবিজ্ঞান হয়ে যায়!
আর আজ উদ্ভট অনেক হাদিস নিয়ে ইসলামে অবিশ্বাসীরা ইসলাম বুঝা তো দূরের কথা এগুলো দিয়ে আলু পুড়া খাচ্ছে আর মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে তামাসা করছে!
তাই হাদিসকে ফেলে দিতে বলছিনা, আমরা হাদিস দেখব তবে সেটি পর্যালোচনা করা হবে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে বাস্তবতার নিরিখে আর সেই নিক্তিতে ঠিকলে তা গ্রহন করা যাবে।
হাদিস এসেছে কোন মানুষের রেওয়াত বা বর্ণনা যাকে আখবারে ওয়াহেদ মানে এক ব্যক্ত্যির প্রদত্ত খবর বলা হয়। একজন বিখ্যাত ডাক্তার যখন হাজারো রুগী দেখেন তখন বিশেষ রুগীর অবস্থা বিবেচনায় সে রুগীর যে প্রাইভেট চিকিৎসার পরামর্শ দেন তার সবকিছু কি সব রুগীর জন্য যে প্রযোয্য হতে হবে তা বলা যায় না।