মানুষ আল্লাহর নিকট জান্নাত পাওয়ার জন্য দোয়া করে থাকে কিন্তু মৃত্যুবরণ করতে চায় না কেনো?
উস্তাদ জাভেদ আহমদ গামিদি সাহেবের প্রশ্ন-উত্তর পর্ব
প্রশ্নঃ(ধর্মীয় বিষয়-আশয়ে) আমরা সাধারণত এগুলোকে মতবাদ হিসেবে চিন্তা করি। কিন্তু বাস্তবিক ভাবে কখনোই এগুলো দেখার চেষ্টা করি না। আমরা যদি এগুলোকে বাস্তবিকভাবেই চিন্তা করতাম তাহলে ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত হতো। আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো একজন মুসলিম নামাজের মধ্যে সর্বদা আল্লাহর নিকট জান্নাত কামনা করে থাকে কিন্তু সে মৃত্যুবরণ করতে চায় না। আল্লাহর সাথে আমাদের সাক্ষাৎ করার কোনো ইচ্ছে নেই। অথচ রাসুল (স) বলেছিলেন “ হে আমার রব্ব আমি আপনার সাথে সাক্ষাৎ করার প্রত্যাশা করছি।” এ সমস্ত বিষয় দেখলে তো মনে হয় আমাদের কথা ও কাজের মধ্যে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। আমাদের জ্ঞান ও কাজে দ্বন্দ্ব রয়েছে। অথচ আমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইছি। আপনার কি মনে হয় না যে এ বিষয় গুলো ভুল?
উত্তরঃ(উস্তাদ জাভেদ আহমদ গামিদি সাহেব) আসলে আপনি সঠিক কথা বলেছেন। আল্লাহ তায়ালাকে আমরা আমাদের জীবনে চিরঞ্জিব ও চিরস্থায়ী স্রষ্টা হিসেবে গ্রহণ করতে পারিনি।আল্লাহকে আমরা আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্কের সর্বোচ্চ স্থানে রাখতে পারিনি। আল্লাহকে আমরা আসলে জ্ঞানগত ভূমিকার স্থানে রেখেছি। ফিলোসোফারগণ জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে এ বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে পারে যে, (বিশ্ব জাহানের) প্রারম্ভ কোনো শক্তির মাধ্যমে হয়েছিলো অথবা এর পেছনে কোনো কারণ ছিলো। তবে জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে এগুলো জানার মাধ্যমে স্রষ্টার সাথে আমাদের কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয় না। যদি কোন ব্যক্তি অনেক বছর পূর্বে পানির মধ্যে একটি পাথর ছুড়ে মারে এবং পাথর ছুড়ে মারার দরুন পানির সেই ঢেউ আমার সময় পর্যন্ত চলে আসে। তাহলে এর মাধ্যমে আমার কী অর্জন হবে?
স্রষ্টার সাথে আমাদের সম্পর্ক তখনই জীবিত সম্পর্ক হবে। যখন আল্লাহকে আমাদের জীবনে ওইভাবে প্রবেশ করাব যেভাবে আমার আমাদের মা ও বাবা অথবা আমাদের অন্য কোনো আত্মীয়র সাথে সম্পর্ক গড়ে থাকি। সুতরাং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সবথেকে বড় সম্পর্ক। তিনি আমার স্রষ্টা, আমার মালিক , তিনি আমাকে সমস্ত কিছু দিয়েছেন। আবার ঠিক তেমনি ভাবে একদিন তার নিকট আমার উপস্থিত হতে হবে। এ সমস্ত বিষয় যখন আমাদের মধ্যে জীবিতভাবে উপস্থিত থাকবে তখন এর বহিঃপ্রকাশ সম্পন্ন ভিন্ন হবে।
এজন্যই আমি সবসময় বলে থাকি যে, ধর্ম আসলে কী। আমরা ধর্মকে মনে করেছি কিছু ফরজ , কিছু ওয়াজিব বিধান, জান্নাত ও জাহান্নামের ঘটনা , আর হালাল ও হারামের একটি তালিকা যে এ কাজগুলো করতে পারবে ও এ কাজগুলো করতে পারবে না।
ধর্মকে আমরা কখনই এভাবে চিন্তা করিনি যে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন সেই মহান সত্তাকে আমার জানতে হবে। সেই মহা মহিয়ান স্রষ্টার সাথে আমার সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করতে হবে। এরপরে দেখতে হবে যে তিনি আসলে আমাদের নিকট কি চান। আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য থাকতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জন করা। কিন্তু এই বিষয়টি কখনোই আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে না। অথচ এই বিষয়টিকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখা উচিত ছিলো আমাদের শিক্ষার ও প্রশিক্ষণেরও।
আমরা যখন ধর্মীয় জ্ঞান অপরের নিকট উপস্থাপন করি তখন আমাদের মনে রাখা উচিত যে ধর্মীয় জ্ঞানের উদ্দেশ্য ও উৎস হল বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক গড়া। আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের বিষয় মানুষের ভুল ধারণা থাকার ফলেই(আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক পোক্ত হবার পূর্বেই) মূলত এই প্রশ্ন চলে এসেছে যে কয় ওয়াক্ত নামাজ ফরজ! আপনি কি কখনো আপনার মায়ের নিকট এ প্রশ্ন করেছেন যে আপনার পাশে আমাকে কয়বার বসতে হবে? না কখনো করেননি। কারণ আপনার মায়ের সাথে আপনার সম্পর্ক হচ্ছে জীবিত সম্পর্ক। কিন্তু আল্লাহর সাথে আমরা জীবিত সম্পর্ক তৈরি করতে পারিনি। আমাদেরকে সর্বপ্রথম আল্লাহর সাথে জীবিত সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।