মূল: উস্তাদ জাভেদ আহমাদ গামিদী
ভাষান্তর: ইমদাদ হোসেন
প্রশ্ন : কোনো এক প্রশ্নের জবাবে আপনি বলেছিলেন, ‘দুনিয়ার জন্য ইসলামের চ্যালেঞ্চ-ই সবচেয়ে বড়।’ এমন বাক্য আমরা কখনো কারো মুখে শুনিনি, বরং সাধারণভাবে বলা হয় যে, ইসলামের সামনে ভয়াবহ বিপদ, বাহির থেকে নানা জিনিস ইসলামকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। ‘ইসলামই দুনিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’ — আপনার এই দাবীর স্বপক্ষে কী কী যুক্তি রয়েছে?
জবাব : এই দুনিয়াতে আমাদের নিকট কেবল দুটো জিনিসই রয়েছে —
প্রথমত, আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বস্তুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারি। বস্তুতে কীভাবে প্রাণের সৃষ্টি হয়, প্রাণের মাঝে কীভাবে বোধশক্তি ও চেতনার বিকাশ ঘটে, তা দেখতে পাই। এসব বিষয় আমরা বুঝতে চেষ্টা করি এবং এর মাধ্যমে সূচনা ঘটে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের।[1]
তথাপি, বস্তু, বস্তুতে প্রাণের আবির্ভাব এবং প্রাণের মধ্যে কীভাবে বোধশুক্তি ও চেতনার বিকাশ ঘটে — এতটুকু পর্যন্ত মানুষ আটকে থাকতে চায় না এবং সে এই মহাবিশ্বের হাকিকত জানতে চায়। বস্তু — এটা তো বাস্তব, কিন্তু এটা আসলো কোথা থেকে? বস্তুর মাঝে বোধশক্তির বিকাশ ঘটে — এটা বাস্তব, কিন্তু এই বোধশক্তি কীভাবে আসে? আর সর্বাগ্রে প্রাণের সৃষ্টি প্রক্রিয়াটা কী?
এগুলোর সবই বুনিয়াদি প্রশ্ন এবং এই বুনিয়াদি প্রশ্নগুলো থেকে দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়েই মানব ইতিহাসে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সূচনা ঘটে। অর্থাৎ প্রথমে এটা মেনে নেয়া হয় যে, এই প্রশ্নগুলো আপাতত এখন আর আমাদের বিষয়বস্তু নয়। হয়তো কোনো এক সময় এগুলো আমাদের বিষয়বস্তুতে পরিণত হবে, কিন্তু এখনকার জন্য এগুলো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। ঠিক এ কারণে মানবজাতি বিগত দু’ তিন শতাব্দি ধরে গোটা দুনিয়াকে তার মনোযোগের কেন্দ্রে পরিণত করেছে। ‘সেক্যুলারিজম’ পরিভাষাটি কোথা থেকে আসলো — সেক্যুলারিজম যদিও বর্তমানে নানা অর্থ বহন করে, তথাপি খেয়াল করলে দেখবেন: সেক্যুলারিজম ঠিক তখনই পয়দা হয়েছে, যখন মানুষ ঠিক করলো ধর্ম, ধর্মীয় কালচার, আধ্যাত্মিকতাকে কিছু সময়ের জন্য একপাশে সরিয়ে আগে নিজেদের দুনিয়াকে উন্নত করতে হবে, দুনিয়ার ব্যাপারে আমাদেরকে যে বুদ্ধি ও জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তা দিয়ে দুনিয়াকে জানতে হবে। ফলশ্রুতিতে দুনিয়া পরিণত হয় মানবজাতির মনোযোগের প্রধান কেন্দ্রে। অর্থাৎ প্রকৃত মনোযোগের জায়গাটি দখল করে নেয় স্বয়ং মানুষ। মানুষের সমৃদ্ধি, মানুষ কোথায় থাকে, কী ধরনের পরিবেশ তার উপর প্রভাব বিস্তার করে, সেখানে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, সেগুলোকে কীভাবে বাড়ানো যায়, সৃষ্টিকর্তা মানুষকে যেসব যোগ্যতা দিয়েছে, সেগুলোকে কীভাবে শাণিত করা যায় — এককথায়, মানুষই সকল মনোযোগের কেন্দ্রস্থল। এর ফলাফলও কিন্তু বিস্ময় জাগানো। আজ আমরা যে দুনিয়াতে আছি, সেখানে যদি দু’তিনশ বছর আগের কোনো মানুষ আসে, তবে সে তার চোখকে বিশ্বাস করাতেই পারবে না যে, সে কোনো দুনিয়াতে এসেছে। তার জন্য এমন দুনিয়া তো পুরোপুরি স্বপ্নের জগৎ।
এতকিছুর পরেও বুনিয়াদি প্রশ্নগুলোর কোনো একটিও কি আলোচনায় এসেছে? সেগুলোর ব্যাপারে কি একটি শব্দও বলা সম্ভব হয়েছে? ওইসব প্রশ্নকে কি চুল পরিমাণ সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে?
উত্তর হচ্ছে — না।
বস্তু কোথা থেকে এসেছে? বস্তুতে কীভাবে প্রাণের সঞ্চার ঘটে? বোধশক্তি ও চেতনা কোথা থেকে আসে?
মজার বিষয় হচ্ছে: ধরে নিলাম বস্তু কোথাও না কোথাও থেকে এসেছে, কিন্তু প্রাণ তো আমাদের চোখের সামনেই সৃষ্টি হচ্ছে, বোধশক্তি ও চেতনাও আমাদের চোখের সামনেই পয়দা হচ্ছে। মানুষের সন্তান, জীবজন্তুর শাবকদের জন্ম তো আমরা নিজেদের চোখেই দেখি। মানবীয় জীবন তথা দৈহিক জীবনের পর্যবেক্ষণ থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, জন্ম ও বিকাশের পুরো প্রক্রিয়া আমাদের চোখের সামনেই সংঘটিত হয়। অর্থাৎ আমরা খাদ্য খাই, খাদ্য আমাদের উদরে প্রবেশ করে, ফ্যাক্টরির ন্যায় কাজ করা পাকস্থলির যাবতীয় কার্যাবলী আমাদের চোখের সামনে বিদ্যমান — ইচ্ছে হলে পুরো প্রক্রিয়া নিজের চোখেও দেখা সম্ভব।
তথাপি আমরা ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে, যেখানে আগে ছিলাম।
বাহ্যত, এগুলো বেশ ভারী প্রশ্ন। আর মানুষ এই প্রশ্নগুলোর মাঝে এক ধরনের সফর করছে, আর তা হচ্ছে: এগুলোকে এককোণে সরিয়ে রেখে বেমালুম জীবনযাপন করা, আর মাঝে মাঝে কিছুটা তৃপ্তির ঢেকুর তোলার জন্য বলা যে, আমরা বহু বড় বড় সমস্যা সমাধান করেছি, বিস্তর গবেষণা করেছি এবং দুনিয়ার বহু অজানা রহস্য উন্মোচন করেছি, আর কোনো একদিন আমরা এসব প্রশ্নেরও উত্তর বের করে ফেলবো এবং সেদিন যাবতীয় ধাঁধার অবসান ঘটবে। এগুলো বলে সে আরামের সাথে হেলে-দুলে পথ চলছে।
মানবজাতির এই সফরে এই বুনিয়াদি তিন প্রশ্নকে সে একপাশে রাখলেও যখন মহাবিশ্ব নিয়ে সে গবেষণায় নামে, তখন একে একে তার সামনে আসতে থাকে নানা প্রশ্ন — যেমন: সময় (Time) কী, স্পেস (Space) কী, সময়ের হাকিকত কী, স্পেসের হাকিকত কী। এখানে মানুষের জন্য নিজের অক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করা ব্যতীত ভিন্ন কোনো অজুহাত নেই। এসবের ব্যাপারে মানুষ এতকাল ধরে যেসব কল্পরাজ্য গড়ে তুলেছিল, সেগুলোও একে একে ধুলোয় মিশে যাচ্ছে।
এমন নাজুক পরিস্থিতিতে, উপরে যা যা উল্লেখ করলাম, তার সব এক পাশে আর অন্যপাশে — কুরআন।
কুরআন এসবের ব্যাপারে চূড়ান্ত রায় দেয়ার পাশাপাশি জোরের সাথে বলে দেয় এগুলোর মূল কোথায়। এগুলোর সূচনা কোথায়। কে এগুলোর সূচনা করেছেন। যে সত্তা এগুলোর সূচনা করেছেন, তাঁর গুণাবলী কী কী। নাজিলের প্রায় ১৫ শতাব্দি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও এই গ্রন্থের একটি অক্ষরের বেলায় এটা বলা সম্ভব হয়নি যে, মহাকাল তাকে ভুল প্রমাণ করেছে।
কুরআন তার আপন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে সমুন্নত শিরে।
ফলশ্রুতিতে, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান যখন উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করছে, তখন তার মুকাবিলায় কে দাঁড়িয়ে? বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল নয় এমন কী কোনো জ্ঞান আছে, দুনিয়া ও প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল নয় এমন কী কোনো জ্ঞান রয়েছে, যা বিজ্ঞানের মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে?
বস্তুত, এ ধরনের জ্ঞানের ব্যাপারে দার্শনিকগণ কল্পরাজ্যে দর্শন ও মেটাফিজিক্সের যে সুবিশাল ইমারত দাঁড় করিয়েছেন, তা তো ইতোমধ্যে ধ্বসে পড়েছে।
এমনটাই যদি হয়ে থাকে, তবে দৃশ্যপটে আর বাকি থাকলো কে?
হ্যাঁ, কুরআন ছাড়া দৃশ্যপটে কিছুই বাকি নেই। দৃশ্যপটে যখন কুরআন, তখন এটা সহজেই অনুমেয় যে, একটা চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েই কুরআন দাঁড়িয়ে আছে। অর্থাৎ কুরআন চ্যালেঞ্জের সুরে বলছে:
— “দুনিয়ার বুকে মানব রচিত কোনো গ্রন্থের ব্যাপারে এমনটি কি কখনো হয়েছে? কখনো কি তার আয়ুষ্কাল এত লম্বা ছিল যে, কেউ তার দিকে আঙ্গুল পর্যন্ত তুলতে সাহস করেনি? কখনো কি কোনো গ্রন্থ কালের গণ্ডি অতিক্রম করতে পেরেছে? বৈপরীত্যহীন কোনো গ্রন্থ কি মানুষ রচনা করতে পেরেছে? মানুষ কথা বলবে, অথচ সে তার যুগের জ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত হবে না — এমনটি কি কখনো হয়েছে?”
এ সমস্ত প্রশ্ন উত্থাপন করে কুরআন চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে এবং বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা দিচ্ছে:
وَلَوْ كَانَ مِنْ عِندِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا
— এই গ্রন্থ যদি কোনো মানুষের রচিত হতো, তবে তোমরা তাতে বহু বৈপরীত্য দেখতে।[2]
— এ গ্রন্থের বাহক পয়গম্বরকে কি তোমরা কখনো কবি ও সাহিত্যিকদের মতো trial and errorএর মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছো? কখনো কি এমনটি দেখেছো?
কুরআন এই চ্যালেঞ্জ ইতোমধ্যেই দিয়ে রেখেছে। এরপর সে বলে:
— এটা এমনই শান ও মর্যাদার গ্রন্থ যে, এটাতে না আছে মানবীয় কোনো দর্শন ও খেয়ালের ছায়া, আর না এটাতে পাবে মানবীয় কোনো ভুল-ভ্রান্তি।
— তোমাদের কাছে এমন কোনো গ্রন্থ তো পরের বিষয় এটার মতো কোনো সূরা কি আছে? যদি থেকে থাকে, তবে তা পেশ করো।
এমন বলিষ্ঠ চ্যালেঞ্জের সাথে কুরআন নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে।
বস্তুত এটাই কুরআনের আসল চ্যালেঞ্জ। মানুষ এটার দিকে তেমন মনোযোগ না দিলেও বাস্তবতা হচ্ছে: বিজ্ঞান যেভাবে আমাদেরকে বর্তমান দুনিয়ার সাথে পরিচয় করিয়েছে, ঠিক তেমনি কুরআনও আমাদেরকে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা ও বলিষ্ঠতার সাথে আরেকটি জগতের সাথে পরিচয় করিয়েছে, স্বয়ং সেটা-ই দুনিয়াবাসীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।
হয় এই চ্যালেঞ্জের সামনে নিজেকে নত করে দেয়া হবে। মেনে নেয়া হবে ওই রাসূলের কথা, যিনি আসমান-জমিনের সকল হাকিকতের ব্যাপারে খোদায়ী সংবাদ দিতে এসেছেন; অন্যথায় পাত্তা না দিয়ে এর থেকে দূরে সরে পড়া হবে। কিন্তু এটার চোখে চোখ করে এর ছুড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করা কিংবা এটাকে পরাস্ত করা কখনো সম্ভব নয়।
সম্পূরক প্রশ্ন : গালিব ও মিল্টনের কাব্যগ্রন্থ, শেক্সপিয়ারের উপন্যাস ইত্যাদি বইগুলো তো আমাদের যুগের মানুষও পড়ছে, সময়ের সাথে সাথে এগুলোও বর্তমানে সফর করছে, আমাদের যুগের বহু পণ্ডিত বই লিখছেন, সেগুলোও তো মানুষ পড়ছে, অন্যদিকে বহু পুরাতন বইও সময়ের গণ্ডি পাড়ি দিয়েছে — এ ব্যাপারে কী বলবেন?
জবাব : [কুরআনের ন্যায়] এমন বই একটিও নেই।
মানুষ যখন গালিব বা মিল্টনের বই পড়ে, তখন কি তারা সেখানে বর্ণিত বিষয়গুলোর হাকিকত জানার জন্য পড়ে? এসব বইয়ের পাতা উল্টানোর আগেই আমরা এটা অবগত থাকি যে, এসব বই কল্পলোকের দাস্তান। যেসব দাবী এই বইগুলোতে করা হয়েছে, তার সবই কবিসুলভ দাবী। এসব দাবীর সাথে না ওই কবির কোনো সম্পর্ক সাথে আছে, আর না আছে হাকিকতের কোনো প্রসঙ্গ। আমরা এগুলোকে সাহিত্যের বই হিসেবে পাঠ করি। সাহিত্যরস আস্বাদনের জন্য পড়ি। এসব বইয়ে যেসব বিষয় আলোচিত হয়েছে, তা বস্তুত মানুষের ব্যক্তিত্বকে সামনে রেখে কল্পরাজ্যে বানানো এক বয়ান। আমরা তো এমন বহু কাব্যগ্রন্থ আজও পড়ি, ইমরুল কায়েসের মতো প্রাচীন কবির রচনাও পড়ি। হাকিকত জানার জন্য আমরা কেউই এসব বই পড়ি না।
বস্তুত দুনিয়াতে এমন কোনো গ্রন্থ নেই, যা তার সমসাময়িক যুগের জ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত হয়নি।
[1] দ্বিতীয়টি হচ্ছে: কল্পলোক। বাহিরের দুনিয়াকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যেভাবে বিজ্ঞান সামনে এগিয়েছে, ঠিক তেমনি স্বীয় সত্তা বা soul কে পর্যবেক্ষণ এবং তার ভিত্তিতে যে জ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে, এখানে সেটাকে দ্বিতীয় জিনিস হিসেবে ইশারা দেয়া হয়েছে। মোটাদাগে মেটাফিজিক্স হচ্ছে এটার বহিঃপ্রকাশ। প্লেটোকে এটার জনক বলা হয়।
[2] সূরা নিসা, ৪:৮২। ভাবানুবাদ এটা।
[ভাষান্তর: ২৬–০২–২০২৩]
[সংক্ষিপ্ত নোট: কুরআনের ওহী নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নিকট আয়াত হিসেবে নাযিল হয়। নাযিলকৃত এই আয়াতগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বহু সাহাবা মুখস্ত করে ফেলতেন এবং ওহী লেখকগণ সহজলভ্য লেখনী উপাদান, যেমন: পাতা, বস্ত্র, হাড় ও পাথরে ওই আয়াতগুলো লিখে রাখতেন। পরবর্তীতে ওহী নাযিলের ধারা সমাপ্ত হলে আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক গোটা কুরআন তার চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। কুরআনের বিন্যাসে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নবী (ﷺ) এটার সংরক্ষণে কোনো ঘাটতি রাখেননি। কুরআন মুখস্ত করা এবং অন্যদেরকে তা শেখানোর এক জীবন্ত কালচার তিনি তার অনুসারীদের মাঝে জন্ম দিতে সফল হয়েছিলেন, যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকলেই অংশ নিয়েছিল। প্রত্যেকে নিজ নিজ সামর্থ্য মোতাবেক কুরআন মুখস্তে নেমে পড়ে — কেউ পুরো কুরআন, কেউ অর্ধেক, কেউ এক তৃতীয়াংশ। এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্থানান্তরিত হতে থাকে মৌখিক কুরআন, ইসলামী পরিভাষায় যা ‘কিরাতে আম্মা’। এজন্যই কুরআন লিখিত কোনো পাণ্ডুলিপির মুখাপেক্ষী নয়, বরং লিখিত কুরআন ‘কিরাতে আম্মা’ বা সর্বসাধারণের কিরাতের মুখাপেক্ষী। এ যেন বর্তমানের ‘অডিও বুক’ (Audio Book)-এর মানবীয় সংস্করণ, যা বয়ে বেড়াচ্ছে হাজারো থেকে লাখো হাফিজ। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ড. শেহজাদ সালিম রচিত History Of The Quran: A Critical Study গ্রন্থটি দেখুন।]